মার্কিন মুদ্রার দ্রুত বৃদ্ধি বাজারকে বিভ্রান্ত করেছে। বিশ্লেষকরা এবং ট্রেডারদের মনে একটি প্রশ্নের উদয় হয়েছে: মার্কিন ডলার কতদিন বৃদ্ধি পাবে? অনেকেই লক্ষ্য করছেন যে মার্কিন ডলার ধীরে ধীরে ভিত্তি হারাচ্ছে। এই পটভূমিতে, ইউরো পয়েন্ট বাড়ানোর এবং মার্কিন ডলারকে ধরার চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা গ্রিনব্যাকের বৃদ্ধি এবং ইউরোর হ্রাসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে EUR/USD পেয়ারের উল্লেখযোগ্য ভারসাম্যহীনতার আশঙ্কা করছেন। আজকে পর্যন্ত, এই পেয়ারের ভারসাম্য বজায় থাকলেও তা বেশ ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি, ইউরো ধীরে ধীরে অর্থনীতিতে হারানো জায়গা ফিরে পাচ্ছে। 10 মে মঙ্গলবার সকালে, EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.0567-এর স্তরের কাছাকাছি এসে আগের ক্ষতিপূরণ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপদ বিনিয়োগস্থল হিসেবে খ্যাত সম্পদগুলোতে মূলধনের প্রবাহ এবং মার্কিন সরকারের বন্ডের ক্রমবর্ধমান ইয়েল্ড থেকে গ্রিনব্যাক লাভবান হচ্ছে। মার্কিন ডলারের কারণেই EUR/USD পেয়ার 1.0500-এর স্তরের উপরে অবস্থান করছে এবং 1.0600-এর স্তরের দিকে যাচ্ছে। তবে, বাজারের মনোভাব হতাশাবাদী হলে আগামী দিনে এই পেয়ারের উপর বিয়ারিশ চাপ বিদ্যমান থাকবে।
রুশ-ইউক্রেনীয় ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব এবং মন্দার ঝুঁকির পটভূমিতে বাজারের ট্রেডাররা আশা করছেন যে ইউরো ডলারের সাথে সমতা বজায় রাখতে পারবে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে সৃষ্ট সঙ্কট স্ট্যাগফ্লেশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। ব্লুমবার্গ ধারণা করছে যে এরূপ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে "20 বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ডলারের বিপরীতে ইউরোর সমতা আসতে পারে,"। এই সংবাদ সংস্থা পরিচালিত এক জরিপে উত্তরদাতাদের অধিকাংশই ধারণা করছে যে ইউরো আরে ডলারের মান সমান হবে। আমেরিকানদের তুলনায় ইউরোপীয়দের মধ্যে এই ধরনের সিদ্ধান্তের সমর্থক বেশি। একই সময়ে, অনেক ট্রেডার আশা করছেন যে মধ্য মেয়াদে ইউরো 1.1500 এর স্তরে পুনরুদ্ধার করবে।
বর্তমানে, EUR/USD পেয়ার 2016-এর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরে, এই পেয়ারের মূল্য 1.0500 এবং তারও উপরে চলে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, EUR/USD পেয়ারের দীর্ঘমেয়াদী সংশোধন এটিকে 1.0700-1.0760 স্তরে নিয়ে যাবে, যেখানে শক্তিশালী ফিবোনাচি স্তর রয়েছে৷ এটি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের কারণে সহজ হয়েছে।ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক 2022 সালের জুলাই মাসে সুদের হার বাড়ানোর জন্য প্রস্তুতির ঘোষণা করেছিল।
এই পটভূমিতে, স্বল্পমেয়াদী ব্যর্থতা সত্ত্বেও মার্কিন মুদ্রা তার অবস্থানকে শক্তিশালী করে চলেছে। দুটি কারণে ডলার দৃঢ়ভাবে সমর্থন পেয়েছে - ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হারে 50 বেসিস পয়েন্ট (bp ) বৃদ্ধি এবং নিরাপদ বিনিয়োগস্থল হিসাবে মার্কিন ডলারের উপর আস্থা। বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহুর্তে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথাকথিত "আর্থিক নীতি কঠোর করার জন্য নমনীয় বিকল্প" বেছে নিয়েছে। এর অর্থ হল যে সুদের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে, কিন্তু খুব বেশি নয় (সুদের হার 75 বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর প্রত্যাশা করা হলে তা 50 বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে), এবং ব্যালেন্স শীটে সম্পদের বিক্রয়ের কার্যক্রমও চালু করা হয়েছে। কিন্তু অবিলম্বে মাসিক ভিত্তিতে $95 বিলিয়নের ব্যালেন্স শিট বিক্রি করা হবে না যা তিন মাস পরে করা হতে পারে। বর্তমানে, ফেডের বিক্রিত সম্পদের পরিমাণ মাসিক $47.5 বিলিয়নের বেশি নয়। এই সিদ্ধান্তকে সমীচীন মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফেডের চালুকৃত আর্থিক নীতিমালা কঠোর করার প্রক্রিয়া গ্রিনব্যাকের চাহিদা বাড়িয়েছে। অবশ্য, মার্কিন ডলার আরও বৃদ্ধি প্রদর্শন করবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে, কারণ এটির অবাধ ঊর্ধ্বমুখী গতি মধ্যমেয়াদী শক্তিশালীকরণের জন্য বাধা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত মাসে ডলার সূচক (ইউএসডিএক্স) সংশোধনকে পাশ কাটিয়ে খুব দ্রুত বেড়েছে। বাজার এইরূপ কর্মকান্ড ক্ষমা করবে না, তাই গ্রিনব্যাককে এই ধরনের উর্ধ্বগতির ব্যাপারে কাজ করতে হবে।
ডলারের গতিশীলতার সাথে সম্পর্কিত জটিলতাগুলো ফেডের ক্রিয়াকলাপে প্রতিফলিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন মুদ্রাস্ফীতি এবং মন্দার ডামাডোলের মধ্যে আটকা পড়েছে। ম্নে রাখবেন যে আকাশচুম্বী মুদ্রাস্ফীতির জন্য কঠোর মুদ্রানীতিমালা আরোপ করা প্রয়োজন, কিন্তু একই সময়ে, এতে মন্দার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অবশ্য, আরেক দফা মুদ্রাস্ফীতি রোধ করার জন্য ফেডকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। বিশ্লেষকদের মতে, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি, সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত এবং ভোক্তা চাহিদা হ্রাসের পটভূমিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার সম্ভবনা রয়েছে।
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নিজেদের অনুরূপ পরিস্থিতিতে খুঁজে পেয়েছে, যা শুধুমাত্র একটি সম্ভাব্য মন্দা সম্পর্কেই নয়, ইউরো অঞ্চলে স্ট্যাগফ্লেশন বা স্থবিরতার হুমকির বিষয়ের মতো উদ্বেগজনক। ব্যাংক অফ ফিনল্যান্ডের গভর্নর ও ইসিবি গভর্নিং কাউন্সিলের মুখপাত্র অলি রেনের মতে, এই মুহূর্তে স্থবিরতামূলক প্রবণতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এই রাজনীতিবিদ ইউরো অঞ্চলের অত্যন্ত কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যা মন্দা এবং স্থবিরতার হুমকির সম্মুখীন।
রেনের মতে, এটি "প্লেগ এবং কলেরার মধ্যে যেকোন একটি বেছে নেয়ার মতো বিষয়।" ব্যাংক অফ ফিনল্যান্ডের প্রধান "মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশিত শক্তিশালীকরণ রোধ করার" উপায় ঘোষণা করেছেন। এটি করার জন্য, 2022 সালের তৃতীয় প্রান্তিকে, অর্থাৎ জুলাই মাসে মূল সুদের হার বাড়ানো উচিত। এর আগে, ইসিবির প্রতিনিধি, ফিলিপ লেন এবং ফ্যাবিও প্যানেটা, গ্রীষ্মের দ্বিতীয় মাসে সুদের হার বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তুতি ঘোষণা করেছিলেন। এর মুল কারণ ইউরো অঞ্চলে ৭.৫%-এর আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি। এটা প্রত্যাশিত যে এই ব্যবস্থা আর্থিক নীতিমালার স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে, যদি না রুশ-ইউক্রেনীয় যুদ্ধ ইউরোপীয় অর্থনীতিকে তলানিতে ফেলে দেয়।
ব্লুমবার্গের মুদ্রা কৌশলবিদরা ধারণা করেন যে ভূ-রাজনৈতিক কারণ এবং আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের উপর ইউরোপের নির্ভরতা বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করছে। অবশ্য, বাজারের অনেক ট্রেডাররারা মুদ্রাস্ফীতির কারণে অচলাবস্থা এবং মন্দার ঝুঁকিকে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির চেয়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন। উপরে উল্লখিত দুই কারণই প্রকৃত বিপদ ডেকে আনছে যা অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিকে আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারে।